Search This Blog

যেভাবে ব্যবসায় সফল হবেন, আপনার চিন্তা ও কর্মের সমষ্টি ঘটান!!!

 যেভাবে ব্যবসায় সফল হবেন, আপনার চিন্তা ও কর্মের সমষ্টি ঘটান!!! 

(সফল ব্যবসায়ী হতে হলে মানে যা করলে আপনি ব্যবসায় সফল হবেনই) 


মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই আর পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত। তাই কেউ যখন ভাবে আমার অনেক অনেক সম্পদ চাই। তাহলে সেই মানুষিক ভাবে অসুস্থ। কারণ সে ভাবে না যে, অনেক অনেক সম্পদ আমি একাই নিয়ে নিলে বাকী মানুষদের কি বাঁচার অধিকার নেই!!! 

 


তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে সবাই মিলেমিশে ভালো ভাবে চলার মধ্যেই কল্যাণ। আর এই কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলেই সহজ হয়। 

নিম্নে কোরআন হাদিসের আলোকে বুঝা যাকঃ

মানুষের চলার জন্য যে সম্পদ প্রয়োজন আল্লাহ তা যমিনে দিয়ে দেন। কিন্তু মানুষ যখন জ্ঞানশূন্য হয়ে সম্পদ বেশি মজুদ করে মানে কুক্ষিগত করে, তখন দেখা দেয় সঙ্কট। তাই এইসব লোভী মানুষকে শিক্ষিত/ নজরদারি করা খুবই প্রয়োজন। 

সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ অতি বেশিঃ

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যদি আদাম সন্তানের দু’ উপত্যকা ভরা মালধন থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্খা করবে। আর মাটি ভিন্ন বানী আদামের পেট কিছুতেই ভরবে না। [১১] আর যে তাওবাহ করবে, আল্লাহ্‌ তার তাওবাহ কবূল করবেন। [৬৪৩৭; মুসলিম ১২/৩৯, হাঃ ১০৪৯, আহমাদ ৩৪০১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৩)


দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাঃ

‘মহামহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সূরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)। 

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)


সম্পদের কম বা বৃদ্ধি হবেইঃ 

আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে আরও বলেন, ‘আমি তোমাদিগকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা:-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।

চিন্তা করুনঃ

 ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)। এই সুরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সফল ব্যক্তিদের চারটি গুণের কথা বলেছেন যার একটি ধৈর্য যাকে সাফল্যের নিয়ামকরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।





ধৈর্যেই কল্যাণঃ

আল্লাহ কোরআনে ৯০বার ধৈর্যের কথা কোরআনে বলেছেন। ধৈর্য এমন একটা গুন যা দিয়ে পৃথিবীর ও আখিরাতের সব কিছুই জয় করে ফেলা যায়। আল্লাহ আমাদের যেমন শরীরে কোটি কোটি টাকার অঙ্গ - প্রতঙ্গ,  সারা জীবন ফ্রী অক্সিজেন, ফ্রী আলো - বাতাস, সমতল পৃথিবী, পানি, রিযিক ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে জীবনপূর্ণ করে রেখেছে। সেই আল্লাহ আবার বলেছেন বিপদ - আপন, রিযিক সংকোচন, ভয়, জানের ক্ষতি, মালের ক্ষতি ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করবেন। আল্লাহর এই পরীক্ষার কারণ তিনি আমাদের এমন জান্নাতের প্রতিশ্রুতি যা কল্পনাহীন সুন্দর ও চিরস্থায়ী। সেখানে কোন দুঃখ - কষ্ট বা খারাপ কিছুই থাকবেনা। 


তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হও। তোমরা সাহস ও ক্ষমতাহারা হয়ে যাবে যদি নিজেদের মধ্যে বিবাদ কর। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (Al-Anfal 8:46)


হে বৎস! সালাত কায়েম করবে, ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে, এটাইতো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (Luqman 31:17)


আর এমন অনেক নাবী ছিল যারা সঙ্গীসহযোগে অনুবর্তী হয়ে যুদ্ধ করেছিল; পরন্ত আল্লাহর পথে যা সংঘটিত হয়েছিল তাতে তারা নিরুৎসাহ হয়নি ও শক্তিহীন হয়নি এবং বিচলিত হয়নি। এবং আল্লাহ ধৈর্যশীলগণকে ভালবাসেন। (Aal-e-Imran 3:146)


‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে। ’ (সূরা আনফাল : ২৮)। 



আপনার দৈনিক খরচের চাহিদা পূরণ হলে অন্য ব্যাবসায়ীকে সুযোগ করে দিনঃ

এই পৃথিবীতে সবারই বাঁচার অধিকার আছে। আর যেহেতু এক মানুষ অন্য মানুষের জন্য পরীক্ষা। আর প্রত্যেক মানুষ ভাই ভাই, তাই একে অপরের কল্যাণকামী হতে হয়। আর সকল মানুষও একে অপরের পরিপূরক, কল্যাণকামী, এক আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং, যে যুক্তিতেই যান না কেন, এক মানুষ অন্য মানুষের সাহায্যকারী হলেই কল্যাণ। 

"সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে নিজে পেট ভরে খায় কিন্তু তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।"

আল-হাদিস


যাকাতের পর্যালোচনাঃ

পৃথিবীতে ধনী আর গরীব থাকবেই। তাই যাতে গরীবরা শেষ হয়ে না যায় আল্লাহ ধনীদের সম্পদে গরীবদের একটা অংশ রেখেছেন। এই অংশটাই হলো যাকাত। গরীবরা যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, ধনীরা কাকে চাকুরীতে খাটাবে। আর তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের ক্রেতাদের একটা অংশও তারা। তাই পৃথিবীর সকল সম্পদ এক হাত হতে অন্য হাতে যাওয়াতেই কল্যাণ। কারণ সকল সম্পদ সামান্য কিছু মানুষের হাতে থাকলে পৃথিবীর বাকী অধিকাংশ মানুষ চলবে কিভাবে? আর অধিকাংশ মানুষ ধনীদের সম্পদ কিনে দেখেই ধনীরা আজ ধনী। সাধারণ মানুষ যদি বলে যে তারা ধনীদের কোন পণ্য কিনবে না, তাহলে ধনীরা তাদের পণ্য বিক্রি করবে কিভাবে? বা গরীবরা যদি ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ধনীদের পণ্য বিক্রি হবে কাদের কাছে? পৃথিবীতে যেমন প্রতিটি জীব একে অপরের উপর সরাসরি বা অন্য যেকোনভাবে নির্ভরশীল। তেমনি মানুষও সবাই সবার উপর নির্ভরশীল। তাই সবাইকে সবার অধিকার দেওয়াতেই কল্যাণ। ভোগে রোগ হয়, ত্যাগেই কল্যাণ।


সুতরাং,  সম্পদের প্রতিযোগিতায় নয়, বরং একে অন্যকে ভালো রাখার প্রতিযোগিতা করুন। তাতেই সবাই সুখী হতে পারবো। পৃথিবী সুন্দর হবে। আর বিদায় নিবে দুঃখ।

 প্রতিযোগিতা করলে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বাড়ে। আর সহযোগিতা করলে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বাড়ে। চলুন সবাই আন্তরিকতা ও ভালোবাসার প্রতিযোগিতা করি। পৃথিবীকে সুন্দর করি।

Post a Comment

0 Comments