নারী পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, আদর আর ভালোবাসার নাম। তাই তাকে নিয়ে সবাই ভাবে আর তার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে। সেই নারী নিজেও চায় একটু স্বাধীনতা। তাই এই নারী স্বাধীনতা নিয়ে একটু ভাবা যাক।
নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললে পুরুষের বিষয়ও চলে আসে। পুরুষ নারী একে অপরের পরিপূরক। পুরুষকে বাদ দিয়ে নারী বা নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষ কোনটাই সম্ভব নয়। কারণ দুইজন মিলেই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা হচ্ছে। দুইজনের মিলের অভাব হলে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য।
এখন কথা হল সমান সক্ষমতা সম্পন্ন কেউ কারো আনুগত্য স্বীকার করেন না। এইটাই প্রাকৃতিক সত্য। তাই আমরা যদি নারী আর পুরুষের গঠনগত বিষয় মিলিয়ে দেখি। তাহলে আমরা দেখি নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। পুরুষের যা প্রয়োজন তা নারীর মধ্যে আছে আর নারীর যা প্রয়োজন তা পুরুষের মধ্যেই আছে। আর নারী শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারে পুরুষ হতে দূর্বল। সমাজে টিকে থাকতে নারীর পুরুষের সাপোর্টের প্রয়োজন। যে সাপোর্ট পেলে নারী নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে নারীর শারীরিক সক্ষমতা যে কম তা প্রমাণিত। এইখানে নারীকে ছোট করা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল আনুগত্য স্বীকারের বৈধতা যাচাই করা। তাই বাস্তবতা হল নারী পুরুষের অধীনে থাকলেই নিরাপদ। ধর্মও তাই বলে।
ইসলামই পরিবারকে যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সেই পারিবারিক কাঠামো ও কার কি দায়িত্ব তাও স্পষ্ট বলে দিয়েছে। ধর্ম পুরুষকে দুইটা কারণে নারীকে পুরুষের অধীনে থাকতে বলেছে। প্রথমে বললো গঠনগত দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দান আর দ্বিতীয় বিষয় হলো উপার্জনের দায়িত্ব। কোন পুরুষ উপার্জন করতে না পারলে তার স্ত্রী রাখার অধিকারই নেই। কোন স্ত্রীকে চাপাচাপি করা যাবেনা আয় করার জন্য। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হল প্রথমত স্বামীর আনুগত্য করা দ্বিতীয়ত স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা। অর্থাৎ দুইজন মিলেই পরিবারের কল্যাণে কাজ করা। একজন পরিবারের জন্য আয় করে রসদ নিয়ে আসবেন। আর অন্য জন সেই রসদের দায়িত্বে থাকবেন। (সূরা নিসা- আয়াত ৩৪)। একই আয়াতে আবার বলা হয়েছে যে, যদি নারীদের অবাধ্যতার আশংকা হয় তাহলে তাদেরকে সদুপদেশ প্রদান কর, তাদেরকে শয্যা হতে পৃথক কর এবং তাদেরকে প্রহার (সর্বোচ্চ মিসওয়াক দিয়ে) কর; অনন্তর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুন্নত, মহা মহীয়ান।
পরিবারের গুরুত্ব নিয়ে আরেকটু বলি, যেমন- নতুন পোশাক কারখানায় তৈরি করে তা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তেমনি মানুষ তৈরির কারখানা হল পরিবার, এই পরিবার মানুষ তৈরি করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ নারী-পুরুষের মিল আর মিলনেই মানুষ সকল জন্ম নিচ্ছে পরিবারে। তাই, এই পরিবার যত দৃঢ় হবে, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব ও অবস্থান ততই দৃঢ় হবে।
নারী সংসারের আরো অনেক দায়িত্ব পালন করেন যেমন- সন্তান জন্ম দান, লালন-পালন, রান্না, ঘরের কাজ যা পুরুষও তার সাধ্য অনুযায়ী সাপোর্ট দিতে হয়। নারী অসুস্থ হলে তার সেবা ও সংসারের কাজও সামাল দিয়ে নিতে হয়।
এখন প্রশ্ন হলো নারী আর পুরুষ দুইজনই উপার্জনে গেলে সমস্যা কোথায়। চলুন আমরা যাদের উন্নত দেশ হিসেবে জানি, সেই সকল দেশে নারীদের চাকুরী করাতে তাদের জীবনে কি প্রভাব পড়ছে একটু দেখে আসি। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, জাপান ইত্যাদি দেশ অর্থনৈতিকভাবে আজ উন্নত। তাদের নারীরাও পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তারা নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে ঘরের বাহিরে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। নারীকে ঘরে সম্মান, আর সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার গুরুত্ব বুঝছে না। ফলে নারীরা আজ মাতৃত্ব শূন্য হচ্ছে। সন্তান উৎপাদন অর্থাৎ জন্মদান খুবই কঠিন কাজ। যা ঘরের বাহিরে কাজের পাশাপাশি করা কঠিন। এটা নারীর চাকুরীর ক্যারিয়ারে যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলে তেমনি সংসারে আর সন্তানদের কোয়ালিটি সময় দেওয়া হয় না। তার স্বামী কাজ থেকে এসে স্ত্রীর মাঝে প্রশান্তি খোঁজা কঠিন হয়ে যায় কারণ সেই স্ত্রীও চাকুরী থেকে এসে ক্লান্ত থাকে।যেকারণে চাকুরীরত নারীদের সন্তান উৎপাদনের বা আদর্শ পরিবার গঠনের গভীর প্রয়োজনীয়তা গভীর অনুভব করলেও তা আর হয়ে উঠে না। আপনি গুগলে সার্চ দিলে দেখবেন উন্নত দেশ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ইত্যাদি সকল দেশের নারীরা সারা জীবনে গড়ে মাত্র ১টা হতে ১.৫টা বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে। যার কারণে ঐ সকাল দেশে জনসংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে। আর তারা উন্নয়নশীল দেশ হতে শ্রমিক ও মেধার নাম দিয়ে মানব সম্পদের চাহিদা মিটানোর চেষ্টা করছে। যদিও তাদের আরো অনেক অনেক অনাবাদি জমি পড়েই আছে। জাপানে ১০০টা বাড়ির মধ্যে প্রায় ২০টা বাড়িকে বলা হয় ভূতুড়ে বাড়ি অর্থাৎ ঐ সব বাড়িগুলো মানুষের অভাবে খালি পড়েই আছে। জাপানের জনসংখ্যা ২০৬০ সালে বর্তমান জনসংখ্যা হতে আরো ৩০% কমে যাবে!!!
তাই আমরা যদি নারীদের ঘরে সম্মান ও অধিকার দিতে না পারি, তাহলে আমাদের দেশেও জনসংখ্যার চরম সংকট দেখা দিবে। তাই নারীদের ঘরে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। যাতে তারা পুরো পারিবারিক জীবন সাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পারে এবং তাদের পরিবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে কিছু উৎসাহমূলক পদক্ষেপও নেওয়া প্রয়োজন। তা না-হলে এই পৃথিবীতে জনসংখ্যার চরম সংকট হবে এবং পৃথিবী মানুষের বদলে জন্তু জানোয়ারের দখলে চলে যাবে। মানুষ সংখ্যা অত্যধিক কম হলে পৃথিবীতে জন্তু জানোয়ারের সংখ্যা বেড়ে বাকী মানুষদেরও শেষ করে দিবে ওঁরা। নারীকে নির্যাতন যেমন খারাপ তেমনি নারীকে চাকুরীতে দেওয়াও খারাপ।
তাই আসুন মানুষ বাঁচাতে নারীদের ঘরে থাকার প্রয়োজন অনুভব করি আর তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করি। আর পুরুষরা উপার্জনের দায়িত্ব নিন। পুরুষ এবং নারী মিলেই হল মানব জাতি তথা পৃথিবীর সকল মানুষ। হ্যাঁ, আদম আঃ জান্নাতে একাকিত্ব বোধ করার কারণেই তার হতে তার সঙ্গীনি সৃষ্টি করা হয়, যাতে তিনি তার মাঝে প্রশান্তিতে থাকেন। নারী আর পুরুষে পার্থক্য নয়, বরং নারী আর পুরুষ মিলনেই মানুষ হয়!!!
তিন (০৩) নিয়ে নারীর পর্দা, শুধু বোরকা নয়!
0 Comments