Search This Blog

খাবার গ্রহণের পরিমাণ নিয়ে সতর্কতা!!!

 খাদ্য গ্রহণ মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি। মুখে অহেতুক রুচি লাগিয়ে স্বাদ করে আমরা খাই। এই খাবার গ্রহণ বেশি হলে শরীরের সুখ শান্তি বিদায় নেয়। কারণ নানা রকম জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। আর খাদ্য গ্রহণ খুব কম হলেও তা শক্তি ও সামর্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তথা অপুষ্টিও দেখা দেয়। তাই খাবার গ্রহণ হউক পরিমিত। 

 


 

 

খাবার গ্রহণ কিছুটা কম হলেও সমস্যা নাই বরং ভালো, কিন্তু বেশি হলে তা শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়। পরিমিত খাবার গ্রহণ নিয়ে নিয়মগুলো হলঃ

১/ বিসমিল্লাহ বলে খাওয়াঃ

‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহণ করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা। [৫৩৭৭, ৫৩৭৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৭১)

এটা মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ।


২. পিঠ সোজা রাখাতে খাদ্যঃ

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ উদর (পেট) ভর্তি অপেক্ষা আর কোনো নিকৃষ্টতর পাত্র পূর্ণ করে না। আদম সন্তানের জন্য খাদ্য ততটুকুই যথেষ্ট, যতটুকুতে তার পিঠ সোজা করে রাখে।' (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)


৩. সর্বোচ্চ পরিমাণ খাদ্যঃ

আর যদি এর চেয়ে বেশি খেতেই হয়, তাহলে সে যেন তার পেটের তিন ভাগের এক ভাগ (খাবার) আহার করে, (পেটের) তিন ভাগের ১ ভাগ (পাণীয়) পান করে এবং বাকি তিন ভাগের এক ভাগ যেন শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)

সুতরাং, আমরা মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য খাবার খাবো, আর যদি বেশি খাই তাহলে পেটের তিন ভাগের শুধু একভাগ খাবার খাবো।


 ৪. মুমিন এক পেটে খায় সাত পেটে নয়ঃ 

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহ.) নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে আনা হতো। একদা আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব অধিক আহার করল। তিনি বললেনঃ নাফি‘! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন এক পেটে খায় আর কাফির সাত পেটে খায়। [৫৩৯৪; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০, আহমাদ ১৫২২০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮৮)

সুতরাং, ইবাদতে স্বাদ পেতে এক পেটে খাবার খাবো সাত পেটে নয়। তাহলে শরীরের সুখ বিদায় নিবে এবং মনে অশান্তি বাসা বাঁধবে।

৫. কাউকে সাথে নিয়ে খাওয়াঃ

‘আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় কোরো না। (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৬)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট। [মুসলিম ৩৬/৩৩, হাঃ ২০৫৮, আহমাদ ৭৩২৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮৭)

 


 সুতরাং, আমরা চেষ্টা করবো খাবার শেয়ার করে খেতে। শেয়ার করে খাবার খেলে দুইটা উপকার; প্রথম উপকার হল বেশি খাওয়ার ঝুঁকি থাকে না; দ্বিতীয় হল অন্যের সাথে খাবার শেয়ার করলে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা  বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণও অপচয়ের অংশ কারণ তা যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনিভাবে অতিরিক্ত ব্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়।

 

৬. সফল ব্যক্তিদের খাওয়াঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে তিনদিন পরিতৃপ্তির সঙ্গে আহার করতে পাননি। [মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৭৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯ম/৪৮৭০)

নবী সঃ এর চাইলে তার খাদ্যের অভাব হতোনা কিন্তু তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন মুমিন, মুসলমানের দুনিয়ার জীবন কেমন হওয়া চাই। আমাদের ঝুঁক থাকবে আখিরাতের প্রতি আর দুনিয়ায় চলার পথে যা পাবে তাতেই শুকরিয়া আদায় করা। দুনিয়ার সামান্য সুখের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে আখিরাতের চিরস্থায়ী সুখের প্রতিযোগিতা হতে ভূলে,দূরে বা উদাসীন থাকার সুযোগ কোথায়?!!!  


৭. খাবার দ্বারা উপভোগ নয়ঃ

মুসলিম শুধু শুধু খাদ্য ও পানীয়ের মজা উপভোগ করার জন্য পানাহার করে না। বরং, সে ক্ষুধার্ত না হলে খায় না এবং পিপাসার্ত না হলে পান করে না। আবার যারা পরিমিত খাবার খায় অর্থাৎ ক্ষুধা লাগলে শুধু তা মিটানোর  জন্য খায় তারা খাবারে খুব তৃপ্তি ও স্বাদ পায়। অন্যেরা যখন অভিযোগ করে মজা হয়নি বা স্বাদ লাগেনা; তখন পরিমিত আহারকারী বলে, আলহামদুলিল্লাহ খুব মজা, স্বাদ ও তৃপ্তি পেলাম!!!

“আমরা এমন এক জাতি— ক্ষুধা না লাগলে আমরা খাই না; আর যখন আমরা খাই, তখন পেট ভরে খাই না।”[1]

[1] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৬৪; তিনি বলেন: এ হাদিসটি কে বর্ণনা করেছেন তা আমার জানা নেই; সম্ভবত তা সাহাবীগণের আছারসমূহের মধ্য থেকে একটি ‘আছার’ এবং তা হাদিসে নববী নয়; আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।


৮. বাংলা প্রবাদ বাক্যঃ

যে পেট পরিস্কার রাখে, নূন দিয়ে দাঁত মাজে, পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রেখে খাবার খায় তাকে বদ্যি (বুড়ো) ডাকতে হয় না!!!

আমাদের বাংলা প্রবাদ বাক্যগুলো অনেক সমৃদ্ধ অর্থাৎ কিসে আমাদের কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ তা স্পষ্ট করে বলা আছে প্রচলিতবাক্যে মানে প্রবাদবাক্যে। ঠিক পরিমিত আহার নিয়েও বলা হয়েছে কম খেয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে। 


৯. অতিরিক্ত খাবার গ্রহণও অপচয়ঃ

যারা পেট ভরে খায় তাদের ৩টি ক্ষতি যেমন-

ক. অতিরিক্ত খাওয়াতে টাকা অপচয়

খ. শরীর নামক মেশিনটি নষ্ট হয়

গ. আবার ঔষুধেও টাকা অপচয় হয়


 ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) খাওয়ার পর তাঁর তিনটি আঙুল চেটে নিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কারো খাবারের লোকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তার ময়লা দূর করে তা খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমাদের তিনি থালাও চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়েছে, তা তোমাদের জানা নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮০৩)

 যিনি পরিমিত আহার করেন, তাহার পেট কখনও বুকের চেয়ে উচুঁ হবেনা বরং নিচু হবে।

এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে, যে খাবার খেতে হয় কম কিন্তু শক্তি ও পুষ্টি বেশি। তাই গোসত, মাছ, ডিম, দুধ, খেজুর, দেশী ফল, আঁশ যুক্ত খাবার, বাদাম, মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে হবে। এবং এইসব কম খেতে হয় এবং সঠিক পরিমাণে শক্তি ও পুষ্টি পাওয়া যায়। অন্যদিকে আলু, ভাত, খাদ্যশস্য(Cereal, Oats), আটা ও ময়দা(রুটি, পিঠা ও বিভিন্ন প্রকার বানানো খাবার) ইত্যাদি খাবার সহজেই পেটে হজম হয়ে যায় এবং বারবার পেটে খুদা লাগে। যে কারণে তা বেশি খাওয়া হয় এবং শরীরে নানা রকম জটিলতা তৈরি করে। 

 অতিরিক্ত খাবার যেমন মানুষের শরীর নষ্ট করে দেয় তেমনি তার সকল বিবেক বুদ্ধি শেষ করে দেয়!!!  আল্লাহর নিকট তৌফিক কামনা করছি, ঈমানের স্বাদ পাওয়ার জন্য বেশি বেশি কাজ করার সুযোগ পেতে, আমিন। 


Post a Comment

0 Comments